ইংরেজির উৎপত্তি। লেখক: ইকরাম হোসেন নিশাত

সমাজের নিয়মনীতি যেমন ক্রমাগত বদলায়, ভাষাও তেমনই পরিবর্তনশীল। কালের পরিক্রমা ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের ফলে ভাষা ক্রমাগত বিবর্তিত হয়। এটা যেমন আমাদের বাংলার জন্য সত্য, তেমনি ইংরেজির ক্ষেত্রেও সত্য। বাংলার মতো ইংরেজিও বহুবছর ধরে অন্যান্য ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে মিশে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়েছে, হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে।

ইংরেজি

ইকরাম হোসেন নিশাত

9/10/20251 মিনিট পড়ুন

সমাজের নিয়মনীতি যেমন ক্রমাগত বদলায়, ভাষাও তেমনই পরিবর্তনশীল। কালের পরিক্রমা ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের ফলে ভাষা ক্রমাগত বিবর্তিত হয়। এটা যেমন আমাদের বাংলার জন্য সত্য, তেমনি ইংরেজির ক্ষেত্রেও সত্য। বাংলার মতো ইংরেজিও বহুবছর ধরে অন্যান্য ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে মিশে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়েছে, হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে।


প্রাচীন ইংরেজি (৫ম-১১শ শতাব্দী)

ইংরেজি ভাষার প্রাচীনতম রুপ হলো প্রাচীন ইংরেজি (Old English), যার আবির্ভাব হয় ৫ম শতাব্দীর দিকে ইংল্যান্ডে Angles, Saxons এবং Jutes নামক কতিপয় জার্মানীয় গোত্রের আগমন ও সংমিশ্রণের ফলে। শব্দভাণ্ডারে অনেক তফাৎ থাকলেও বর্তমান ইংরেজির ব্যাকরণ এখনও মূলত এই প্রাচীন ইংরেজির ভিত্তিতেই গড়া। এই ভাষায় রচিত সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যকর্মের নাম হলো ‘বেওউল্ফ’ (Bēowulf)। প্রাচীন ইংরেজি ছিল অনেকটা জার্মান বা নর্ডিক (মানে সুইডিশ, ডেনিশ, ইত্যাদি) ভাষার মতো এবং আধুনিক ইংরেজি থেকে বলতে গেলে পুরোপুরিই আলাদা। উদাহরণ হিসেবে নিচে একটি বাক্যের প্রাচীন ও বর্তমান ইংরেজি অনুবাদ দেয়া হলো:

প্রাচীন ইংরেজি: “Hwæt segst þū? Ic ne understande þæt.”

বর্তমান ইংরেজি: “What are you saying? I don’t understand that.”

মধ্য ইংরেজি (১২শ-১৪শ শতাব্দী)

১০৬৬ সালে ফ্রান্সের তথাকথিত “নর্মান” ফরাসিরা ইংল্যান্ড দখল করে নিলে শুরু হয় মধ্য ইংরেজির (Middle English) যুগ। তখন ইংল্যান্ডের নতুন সম্ভ্রান্ত শ্রেণী ও প্রশাসনে ফরাসি ভাষা প্রচলিত হওয়ায় প্রাচীন ইংরেজি ভাষায় যেমন প্রচুর ফরাসি শব্দ প্রবেশ করে, তেমনি ব্যাকরণও সরলীকৃত ও পরিবর্তিত হয়। Geoffrey Chaucer নামক তৎকালীন এক লেখকের রচিত The Canterbury Tales নামক গল্পগ্রন্থকে ইংরেজি ভাষার অন্তর্বর্তীকালীন এই রূপের প্রধান নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়।


প্রাক-আধুনিক ইংরেজি (১৫শ-১৮শ শতাব্দী)

ইউরোপের রেনেসাঁর সূচনার মোটামুটি একই সময়কালেই ইংরেজি ভাষার প্রাক-আধুনিক রুপের (Early Modern English) আবির্ভাব হতে থাকে। তখন ইংল্যান্ডে মুদ্রণের প্রচলন শুরু হলে যেমন ব্যাকরণ ও বানানের প্রমিতকরণ তরান্বিত হয়, তেমনি রেনেসাঁর প্রভাবে ইংরেজি শব্দভাণ্ডারে বহু গ্রীক ও লাতিন শব্দও প্রবেশ করে। তাছাড়া এই সময়ে নানান কারণে ইংরেজি ভাষার স্বরবর্ণের উচ্চারণে বিপুল পরিবর্তন সাধিত হয়, যা ইতিহাসে Great Vowel Shift নামে পরিচিত, এবং যার ফলে ইংরেজি উচ্চারণ অনেকটাই তার বর্তমান রূপ ধারণ করা শুরু করে। এছাড়াও তৎকালীন ওয়িলিয়াম শেইক্সস্পিয়ারের সাহিত্যকর্ম ও পবিত্র বাইবেলের সংস্করণ 'The King James Bible' ইংরেজি ভাষার বিবর্তনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

আধুনিক ইংরেজি (১৮শ শতাব্দী - বর্তমান)

মূলত ১৭০০ সালের পর থেকেই ইংরেজি ভাষা ক্রমান্বয়ে তার বর্তমান রূপ ধারণ করে। তখন সেমুয়েল জনসনের ১৭৫৫ সালে প্রচারিত ‘ইংরেজি ভাষার একটি অভিধান’ (‘A Dictionary of the English Language’) এবং এমন অন্যান্য অভিধান ও ব্যাকরণগ্রন্থের অবদানে ইংরেজি ভাষা আরও প্রমিত ও সরল হওয়া শুরু করে। তাছাড়া ইউরোপের Age of Enlightenment ও শিল্পবিপ্লবের ফলে আবির্ভূত নতুন বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত, আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ধ্যানধারণা ও বিষয়কে ব্যাখ্যা করতে গিয়েও ইংরেজি ভাষায় প্রচুর নতুন নতুন শব্দের উদ্ভব হয়। একই সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারের ফলে ইংরেজি ভাষাও ইংল্যান্ডের সীমা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বের নানান প্রান্তে ছড়ানো শুরু করে, এবং পরবর্তীতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের পরেও ২০শ শতাব্দী থেকে আমেরিকান মিডিয়া ও পপ-সংস্কৃতির প্রভাবে ইংরেজি ভাষার বিস্তার ও উন্নতি চলমান থাকে।

তবে সাম্প্রতিককালে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উত্থানের পর ইংরেজি ভাষার বিবর্তনের ধারা অনেকটা দ্রুতগতিতেই চলমান । এক্ষেত্রে ইংরেজির ক্রমবিকাশের প্রক্রিয়ার বিকেন্দ্রীকরণ এবং এর উপর জনসাধারণের ব্যবহৃত অপশব্দ ও প্রবাদ-প্রবচনের প্রভাবের বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে বর্তমান মিলেনিয়াল ও জেন-জি প্রজন্মদের ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি দৃশ্যমান। এর প্রভাব এতটাই যে ইন্টারনেটে জেন-জিদের ব্যবহৃত অনেক অপশব্দ অক্সফোর্ড ডিকশনারি ও মেরিয়াম-ওয়েবস্টার কর্তৃক আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। ইংরেজি ও অন্য যেকোনো ভাষার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় যে ভাষা জিনিসটা হলো মানবসমাজের ক্রমবিবর্তনের প্রক্রিয়ার একটি জীবন্ত দলিল। এটা যেমন আমাদের পূর্ব ইতিহাসের চিহ্ন বহন করে, তেমনি আমাদের চিন্তাভাবনা ও আর্থসামাজিক কাঠামোর প্রতিফলনও দেখা যায় আমাদের ভাষার মধ্যে।

ভাষা অধ্যয়নের সময় বেশ একঘেয়েমি এলেও ভাষার ইতিহাস নিয়ে জানাটা অপেক্ষাকৃত মজার। এতে যেমন আমরা পূর্ব ইতিহাস এবং বর্তমান সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি, তেমনি আঁচ করতে পারি আগামীতে কী হতে যাচ্ছে। 

Read in English